নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় (সৈয়দ শামসুল হক)

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - বাংলা সাহিত্যপাঠ | - | NCTB BOOK

নিলক্ষা আকাশ নীল, হাজার হাজার তারা ঐ নীলে অগণিত আর 

নিচে গ্রাম, গঞ্জ, হাট, জনপদ, লোকালয় আছে উনসত্তর হাজার ।

ধবল দুধের মতো জ্যোৎস্না তার ঢালিতেছে চাঁদ-পূর্ণিমার ।

নষ্ট ক্ষেত, নষ্ট মাঠ, নদী নষ্ট, বীজ নষ্ট, বড় নষ্ট যখন সংসার 

তখন হঠাৎ কেন দেখা দেয় নিলক্ষার নীলে তীব্র শিস

দিয়ে এত বড় চাঁদ?

অতি অকস্মাৎ

স্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে কোন ধ্বনি? কোন শব্দ? কিসের প্রপাত ?

গোল হয়ে আসুন সকলে,

ঘন হয়ে আসুন সকলে,

আমার মিনতি আজ স্থির হয়ে বসুন সকলে ।

অতীত হঠাৎ হাতে হানা দেয় মানুষের বন্ধ দরোজায় ।

এই তীব্র স্বচ্ছ পূর্ণিমায়

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় ।

কালঘুম যখন বাংলায়

তার দীর্ঘ দেহ নিয়ে আবার নূরলদীন দেখা দেয় মরা আঙিনায় ।

নূরলদীনের বাড়ি রংপুরে যে ছিল,

রংপুরে নূরলদীন ডাক দিয়েছিল

১১৮৯ সনে ।

আবার বাংলার বুঝি পড়ে যায় মনে, 

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়

যখন শকুন নেমে আসে এই সোনার বাংলায়; 

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়

যখন আমার দেশ ছেয়ে যায় দালালেরই আলখাল্লায়;

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় যখন আমার স্বপ্ন লুট হয়ে যায়;

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়

যখন আমার কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়;

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় 

যখন আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায় ইতিহাসে, প্রতিটি পৃষ্ঠায় ।

আসুন, আসুন তবে, আজ এই প্রশস্ত প্রান্তরে;

যখন স্মৃতির দুধ জ্যোৎস্নার সাথে ঝরে পড়ে,

তখন কে থাকে ঘুমে? কে থাকে ভেতরে?

কে একা নিঃসঙ্গ বসে অশ্রুপাত করে?

সমস্ত নদীর অশ্রু অবশেষে ব্রহ্মপুত্রে মেশে ।

নূরলদীনেরও কথা যেন সারা দেশে

পাহাড়ি ঢলের মতো নেমে এসে সমস্ত ভাসায়,

অভাগা মানুষ যেন জেগে ওঠে আবার এ আশায়

যে, আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায়,

আবার নূরলদীন একদিন কাল পূর্ণিমায়

দিবে ডাক, “জাগো, বাহে, কোনঠে সবায় ?”

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion